* নারী সংস্কার কমিশন বাতিল ও নতুন কমিশন গঠনের দাবি
* মানবিক করিডোরের নামে সার্বভৌমত্ব হুমকিতে ফেলা যাবে না : মামুনুল হক
* আওয়ামী লীগের মৃত্যু বাংলাদেশে, জানাজা দিল্লিতে হাসনাত
* আলেম-ওলামাদের বাদ দিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া হবে না : এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী
* আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ চায় হেফাজতের নেতারা
শেখ হাসিনা টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে ইসলামপন্থীদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তা না করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনকে কোরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী আখ্যায়িত করে এ ধরনের কোনো আইন বা নীতি বাস্তবায়ন না করতে সরকারকে সতর্ক করেছেন তারা। অন্যথায় সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন হেফাজত নেতারা। একইসঙ্গে আলেমদের পরামর্শ ও ধর্মপ্রাণ নারীদের নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এ সময় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশে পাঠ করা ঘোষণাপত্রে এ দাবি তুলে ধরে সংগঠনটি। ১২ দফা ঘোষণাপত্রে সংবিধানে বহুত্ববাদ সংযোজনের আত্মঘাতী ধারণা থেকে সরে আসারও আহ্বান জানানো হয়। ঘোষণা করা হয়, দাবি আদায়ে আগামী ২৩ মে সারাদেশে বিক্ষোভ করবে হেফাজতে ইসলাম।
গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে সংগঠনটির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণাসহ ১২ দফা দাবি পেশ করা হয়। সংগঠনটির নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক এসব দাবি পেশ করেন। আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ্ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ দেশ বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাতারাতি পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। পরে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তারপর থেকে বিভিন্ন মহল, সংগঠন ও দল থেকে ফ্যাসিবাদী দলটিকে নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। এবার একই দাবি করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশও।
দাবি পেশকালে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে গণহত্যাসহ জুলাই আন্দোলনে শহীদ হওয়া ৮৪ জন মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষককে স্মরণ করেন। তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণকারীদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
১. নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও তাদের কোরআন বিরোধী প্রতিবেদন অবিলম্বে বাতিলপূর্বক আলেম-ওলামাদের পরামর্শক্রমে ধর্মপ্রাণ বৃহত্তর নারী সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। নারীর সামাজিক উন্নয়নে পশ্চিমা মূল্যবোধ নয়, বরং আমাদের নিজস্ব সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আলোকেই বাস্তবমুখী সংস্কারের দিকে যেতে হবে। ২. সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করতে হবে। ধর্মপ্রাণ গণমানুষের ঈমান ও আমল রক্ষার্থে বহুত্ববাদ নামক আত্মঘাতী ধারণা থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। এছাড়া লিঙ্গ পরিচয়, লিঙ্গ বৈচিত্র্য, লিঙ্গ সমতা, তৃতীয় লিঙ্গ বা থার্ড জেন্ডার ইত্যাদি শব্দের মারপ্যাঁচে, কাউকে বাদ দিয়ে নয় এমন ধোঁয়াশাপূর্ণ স্লোগানের অন্তরালে এবং অসাম্প্রদায়িক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শব্দের আড়ালে এলজিবিটি ও ট্রান্সজেন্ডারবাদের স্বীকৃতি ও অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সমাজবিধ্বংসী ধর্মবিরুদ্ধ সমকামীবান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠার পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে। ৩. শাপলা চত্বর ও জুলাই গণহত্যার বিচারে গতি আনতে ট্রাইব্যুনালে সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনা ও তার চিহ্নিত দোসরদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ৪. গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করব বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম ও তৎপরতা নিষিদ্ধ করতে হবে। ৫. আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) এর নামে কটূক্তিকারী ও বিষোদ্?গার বন্ধে কঠোর আইন করতে হবে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ধর্মীয় অবমাননা সংক্রান্ত শাস্তির আইনি ধারাগুলো বাদ দেয়ার সুপারিশ বাতিল করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। ৬. চট্টগ্রামে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে শহীদ সাইফুল ইসলাম হত্যার উসকানিদাতা চিন্ময় দাসের জামিন প্রত্যাহারপূর্বক তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে। ৭. ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে সারা দেশে প্রতিবাদী আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও ইসলামমনা তরুণদের বিরুদ্ধে হওয়া মিথ্যে ও বানোয়াট সব মামলা অতিসত্বর প্রত্যাহার বা নিষ্পত্তি করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। সেই সঙ্গে জঙ্গি নাটক বা জঙ্গি কার্ড খেলে বাংলাদেশকে ইসলামপন্থি ও আলেম-ওলামাদের গত ১৫ বছর যারা নির্যাতন চালিয়েছিল তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ৮. গাজার মুসলমানদের ওপর অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের চলমান গণহত্যা ও ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে আমাদের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এই সরকারকে কূটনৈতিকভাবে আরও উচ্চকণ্ঠ হতে হবে এবং দেশের সর্বস্তরের জনতাকে ইসরায়েলি ও ভারতীয় পণ্য বয়কট করতে হবে। ৯. ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ। শিক্ষার প্রাথমিক পর্যায়ে থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সর্ব পর্যায়ে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ১০. রাখাইনকে মানবিক করিডোর প্রদানে সরকারের সম্মত হওয়া সম্পূর্ণরূপে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। আমাদের ভৌগোলিক নিরাপত্তার স্বার্থে এ অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে অবশ্যই অনতিবিলম্বে ফিরে আসতে হবে। ১১. চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে ভিনদেশি মিশনারি অপতৎপরতা ও দৌরাত্ম্য বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা ও নিরাপত্তা সংকট কমাতে আলেম সমাজের দাওয়াতি কার্যক্রমকে আরও নিরাপদ ও সুযোগ করে দিতে হবে। সেখানে সামরিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বৃদ্ধি করা ছাড়াও পাহাড়ি ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক সমঝোতা ও স্থিতিশীলতা বিনির্মাণে রাষ্ট্রীয় তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। ১২. কাদিয়ানীদের বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। সাধারণ মুসলমানদের ঈমান আকিদা রক্ষার্থে কাদিয়ানীদের অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, মানবিক করিডোরের নামে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলা যাবে না। দিল্লির দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছি নিউ ইউর্কের গোলামি করার জন্য নয়। এই অপতৎপরতা বন্ধ না হলে দেশপ্রেমিক জনতাকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি বলেন, একাত্তর সালে মুক্তিযোদ্ধারা বলেছিলেন, আমরা পিন্ডির গোলামির জিঞ্জির ছিন্ন করেছি, দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়। ২৪ এর জুলাইয়ের স্বাধীনতা সংগ্রামের পর আমি বলতে চাই, আমরা দিল্লির দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছি নিউ ইউর্কের গোলামি করার জন্য নয়। যদি বাংলাদেশকে ওয়াশিংটনের দাসে পরিণত করার কোনো চক্রান্ত করা হয়, হিউম্যানিটেরিয়ান করিডোরের নামে বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হরণ করার জন্য অপতৎপরতা চালানো হয়, তাহলে সারাদেশের মানুষের প্রতি আমার আহ্বান, যুদ্ধের প্রস্তুতি নাও। দেশের জন্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নাও।
হেফাজত নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলি, ড. ইউনূসের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকবার সাক্ষাৎ করে বিনয়ের সঙ্গে আবেদন করেছি, আমাদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদি আমলে দায়ের করা মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার করেন। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে আমাদের, সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না। ড. ইউনূস আপনি কী সেই কথা ভুলে গেছেন, কয়েক মাস আগেও আমাদের সামনে আদালত পাড়ায় ঘুরতেন। আগামী দুই মাসের মধ্যে যদি হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের নামে মামলা প্রত্যাহার না হয় তাহলে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের যা করতে হয় তাই করবে। নারী অধিকার সংস্কারের নামে আল্লাহর কোরআনকে, ইসলামকে কটাক্ষ করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ধর্মীয় উত্তরাধিকার বিধান, পারিবারিক বিধানকে নারী-পুরুষের বৈষম্যের প্রধান কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করে নারী বিষয়ক কমিশন এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। তিনি বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে আমরা রাষ্ট্রের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা দেখতে চাই। হেফাজতে ইসলাম বলতে চায়, এই তথাকথিত পশ্চিমা ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী, বিতর্কিত নারীবাদীদের আদর্শ ও দর্শন নয় বরং হেফাজতে ইসলাম প্রদত্ত, আল্লাহ ঘোষিত নারীর ন্যায্য অধিকারে বিশ্বাসী। এরআগে সারাদেশ থেকে আসা হাজারো ধর্মপ্রাণ মানুষের পদচারণায় গতকাল শনিবার ঘুম ভেঙেছে ঐতিহাসিক এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের। ভোর থেকে এখানে জড়ো হওয়া লাখো জনতার উপস্থিতিতে ভাটা পড়েনি তপ্ত রোদ কিংবা দুপুরের বৃষ্টিতেও। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল, বহুত্ববাদ নয় আল্লাহর ওপর আস্থা স্থাপন, শাপলাসহ গণহত্যার অপরাধে আওয়ামী লীগের বিচার দাবি আর আলেমদের মামলা প্রত্যাহারের এই সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সকাল ৯টা থেকে। এরপর একে একে এখানে বক্তব্য দেন, সারা দেশের প্রধান আলেম ওলামা, ধর্মীয় শিক্ষক ও পীড় মাশায়েখরা। তাদের উষ্মা ছিল নারী কমিশন নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে। আওয়ামী লীগ ও ভারতের আগ্রাসন নীতির বিরোধিতায়ও তাদের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট। এই সমাবেশে সংহতি জানান, জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। মোটাদাগে তারা বলেছেন, ফ্যাসিজমের বিলোপ সাধনই সবচে বড় সংস্কার। হাসনাত বলেন, প্রিয় সংগ্রামী সহযোদ্ধা, আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতার ৮ মাস পরে আমরা এখানে জমায়েত হতে পেরেছি। আমরা যেসব দাবিতে আজ এখানে জমায়েত হতে পেরেছি সেটি আমাদের জন্য গর্বের কিছু নয়। বরং এটি আমাদের জন্য লজ্জার। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের প্রতি সারা বাংলাদেশের মানুষ রেড কার্ড দেখিয়ে দিয়েছে গত ৫ আগস্ট। গত ৫ আগস্ট আমরা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি এ ভূখণ্ডে আর আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হবে না। তিনি বলেন, এই আওয়ামী লীগ আমাদের দাঁড়ি টুপিওয়ালা ভাইদের বায়তুল মোকাররম থেকে টেনে টেনে রাস্তায় নিয়ে এসেছে। সেই আওয়ামী লীগের এই দেশে আর পুনর্বাসন হবে না। দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, শাপলা চত্বরে যারা গণহত্যার শিকার হয়েছে তাদের প্রত্যেকের শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা দায়ের করতে হবে। এটাই আজকে আমার এক নম্বর দাবি। তাহরিকে খতমে নবুওয়াত বাংলাদেশের আমির ড. মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী পীর জৈনপুরী বলেছেন, বাক-স্বাধীনতার নামে যেই ইসলামের বিরোধিতা করবে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। জঙ্গি তকমা দিয়ে আমার দেশের আলেম ওলামাদের কারাগারে রাখা হয়েছে। বাবর সাহেব যদি মুক্তি পায় তাহলে জঙ্গির মামলায় আলেম ওলামারা কেন মুক্তি পাবে না। যদি তারা মুক্তি না পায় তাহলে শুধু সংস্কার কেন নির্বাচন পর্যন্ত হতে দেয়া হবে না।
মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী বলেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন করে এবং মানবিক করিডোরের নামে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া হচ্ছে। আমার মনে হয়, নারীবিষয়ক বিতর্কিত সংস্কার কমিশন গঠন করে আমাদের দৃষ্টি ভিন্নদিকে প্রবাহিত করা হচ্ছে, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিক্রির সওদাবাজি হচ্ছে কী না তাও দেখতে হবে। তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম শুধু দাবিই করবে না, সব মাজহাবের মানুষের পূর্ণ সমর্থন হেফাজতে ইসলামের প্রতি আছে। কারণ হেফাজতে ইসলাম হচ্ছে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন। তিনি মহাসমাবেশের পক্ষ থেকে দেশের কোটি কোটি মুসলমানের পক্ষ থেকে হেফাজতে ইসলামের আমিরের উদ্দেশ্যে বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশে রাজনীতি করে না, করবেও না। কিন্তু অপরাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাস কলঙ্কিত উল্লেখ করে আব্বাসী বলেন, দেশের আলেম ওলামা পীরমাশায়েক ও মাদ্রাসা ছাত্রদের পবিত্র রক্তের ওপরে পা রেখে তারা ক্ষমতায় যায়। ক্ষমতায় গিয়েই তারা ইসলাম ও মুসলমানদের চ্যালেঞ্জ করে। এই সুযোগ আর দেয়া হবে না। অনতিবিলম্বে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সমস্ত প্রস্তাব বাতিল করতে হবে। শুধু বাতিল করলেই হবে না, যে নারী নামক হিজড়াগুলো এই দুঃসাহস করেছে তাদের গ্রেফতার করে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। বক্তব্যে ড. ইউনূসকে আহ্বান জানিয়ে এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী বলেন, আমরা গত ১৬ বছর ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রক্ত দিয়েছি। সর্বপ্রথম রামবাম নাস্তিক, ভারতীয় আধিপত্যবাদ, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে শাপলা চত্বরে রক্ত দিয়েছে হেফাজতে ইসলামের আলেম ওলামা কর্মীরা। সেই আন্দোলনের আগ্নেয়গিরিতে গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতা আগুন দিয়েছে। অতএব আলেম ওলামাদের বাদ দিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, ড. ইউনূস সাহেব অবস্থান পরিষ্কার করুন, মানবিক করিডোরের নামে বাংলাদেশকে ইন্দোপ্যাসেফিক অঞ্চলে যুদ্ধে ঠেলে দেবেন না। আমরা ভারতকে শায়েস্তা করেছি। যদি আটলান্টিকের ওপার থেকে কেউ আগ্রাসন করতে আসে তাহলে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মাদ্রাসা হবে একেকটি ক্যান্টনেমন্ট। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাদ্রাসার ছাত্ররা মাঠে নামতে বাধ্য হবে।
আগ্রাসনবাদী শক্তিগুলোর চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দিয়ে মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী বলেন, যদি বাংলাদেশের লালসবুজ পতাকার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকান তাহলে সেই চোখ আমরা উপড়ে ফেলব। আমার বাংলার এক ইঞ্চি মাটিতে কেউ থাবা দিলে সেই হাত ভেঙে দেয়া হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অবশ্যই কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। নাস্তিকদের শায়েস্তা করতে ব্লাসফেমি আইন করতে হবে। এজন্য যদি রক্ত দিতে হয় দেবো, কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করতে মাঠে নামতে বাধ্য হবে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

অন্তর্বর্তী সরকারকে কড়া বার্তা দিলো হেফাজত
- আপলোড সময় : ০৪-০৫-২০২৫ ০৭:০৩:৫১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৪-০৫-২০২৫ ০৭:০৩:৫১ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ